Travel & Explore Yourself | Do It Now, The Future Is Promised To No One.

মাত্র ২২০০ টাকায় ঘুরে আসলাম ৩ দিন ২ রাতের খাওয়া দাওয়া সহ চট্টগ্রামের সব ভ্রমন স্থান।

Leave a comment

লিখেছেনঃপঙ্কজ সরকার।

তারিখঃ ৭/৭/২০১৭

এই ভ্রমণ গাইডটি যারা সল্প খরচ ও সময়ে ভাল একটা ট্যুর অ্যরেঞ্জ করতে চান তাদের জন্য। ভাল লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

মাত্র ২২০০ টাকায় ঘুরে আসলাম ৩ দিন ২ রাতের খাওয়া দাওয়া সহ চট্টগ্রামের
(১) কমলদহ ট্রেইলের কমলদহ ও ছাগলকান্ধা ঝর্ণা
(২) পন্থিছিলার ঝরঝরি ঝর্ণা
(৩) সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়
(৪) সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা
(৫) বাঁশবাড়িয়া ঘাট – মিনি সি বিচ
#বিঃদ্রঃ আমাদের ট্রিপটা ছিল দুই রাত ও তিন দিনের।
ভ্রমনের বিস্তারিত তথ্য
আমরা ২৭/৬/২০১৭ এর রাত ১১:৩০ মিনিটে সায়দাবাদ থেকে বাসে ৪৮০ টাকা করে সীতাকুণ্ড বাজার পৌছাই।
#প্রথম দিন: ভোর সকালে পৌঁছানোর কারনে আমরা প্রথমে হোটেল বুক করি। ৫ জনে দুইটা ডাবল বেডের রুম ৮০০/১০০০ টাকায় পেয়ে যাবেন,আমাদের পার পারসন ১৬০ টাকা করে পরেছে।
সকাল ৭.৩০ এ জনপ্রতি ৩০ টাকায় নাস্তা শেষ করে কমলদহ ঝর্না দেখার উদ্দেশ্য রওনা হই সীতাকুণ্ড থেকে বড়দরগার হাট জন প্রতি ২০ টাকা করে ভাড়া। বড়দরগা থেকে ইটভাটার সামনের রাস্তা ধরে ৪৫ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাই কমলদহ ঝর্না। এক জায়গায় কোমর সমান পানি ছিল বলে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। কিছুক্ষণ ছবি তুলে ও রেস্ট নিয়ে তারপর কমলদহ ঝর্নার ওপরে ট্রেইল ধরে রওনা দেই ছাগলকান্দা ঝর্না দেখার উদ্দেশ্য। পানি বেশী থাকায় ট্রেইলে হেটে ছাগলকান্দা ঝর্না যেতে এক ঘন্টা সময় লাগে।তারপর ছাগলকান্দা ঝর্নার আরো ওপরে উঠে যাই কষ্ট হলেও ট্রেকিং করে।
ওপর টা যে এত সুন্দর না আসলে বুঝতে পারতাম না,আমরা ট্রেইল ধরে ঝর্নার গহীন থেকে গহীনে যেতে থাকি জলপ্রপাত দেখার জন্য। যাওয়ার সময় ছোটবড় অনেক গুলো (কেছকাড) ছোট জলপ্রপাত দেখতে পাই,যেতে যেতে একটা গভীর খুমও এর সন্ধান ও মিলে। আরো গভীরে গিয়ে দেখি ঝিরিপথের কোনো শেষ নেই আর সময় ও কম তাই সময় নষ্ট না করে তাই ব্যাক করি।
তখন ৪ টা বেজে যায়, তারপর আমরা বড়দারোগার হাটে এসে হোটেলে দুপুরের খাওয়া শেষ করি। আমি ডিম, সবজি আর ডাল দিয়ে খেয়েছিলাম। বিল হয়েছিল ৪০ টাকা। আপনারা চাইলে ১০০ টাকার ভিতর ভালোভাবেই খেতে পারবেন যার যেমন ইচ্ছে। খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিয়ে সীতাকুণ্ড ফিরে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সীতাকুণ্ডে রাত ৯/১০ টার পর আপনি ডিনার করার জন্য কিছু পাবেন না তেমন, সব বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে পরে, যেহুতু এইখানে তেমন টুরিস্ট থাকে না তাই। রাতে খাবার খেলাম ৭০ টাকায়। প্রথম দিন খরচ টোটাল: ৮২০ টাকা ( বাস ভাড়া ৪৮০ ও একরাতের হোটেল ভাড়া ১৬০ ধরেই )

#দ্বিতীয় দিন: পরদিন সকাল ৭.৩০ টায় রওনা দেই ঝরঝরি ঝর্নার উদ্দেশ্য নাস্তা ২০ টাকা শেষ করে সীতাকুণ্ড থেকে জন প্রতি ১০ টাকা করে পন্থিছিলা। ওইখান থেকে কোনো গাইড না পেয়ে নিজেরাই হেটে রেললাইন ক্রস করে গ্রামের রাস্তা ধরে চলতে থাকি। পাহাড় এর সামনে যখন আসি তখন ২টা পথ ছিল আমরা ভুল পথে পাহাড়ে উঠে গিয়েছিলাম ডান দিক ধরে পরে নিচে ফিরত এসে একজন কে হটাৎ পেয়ে তার সহযোগিতায় ঝিরিপথ ধরে সকাল ১০ টায় পৌছে যাই ঝরঝরি ঝর্নায়। ওই দিন আমরাই প্রথম টুরিস্ট ছিলাম তাই সামনে পিছনে কাউকে পাইনি তার উপর নতুন পাহাড়ি জায়গা কিছুটা ভয় ভয় ও কাজ করছিলো ডাকাত এর কথা চিন্তা করে। যাই হোক সব কিছু উপেক্ষা করে এমন সুন্দর ঝর্ণা দেখার পর সব কষ্ট যেন মলিন হয়ে গেলো। এত সুন্দর আর পরিস্কার একটা ঝর্ণা তার কারণ এইখানে মানুষ যায় না বললেই চলে তেমন।
তারপর আমরা পাহাড় বেয়ে ঝর্ণার উপরে উঠে ঝিরিপথ ধরে ৪ টা জলপ্রপাত খুঁজে পাই যেগুলা খুব কাছাকাছি ছিল। ঐখানে ছবি ও গোসল করে অনেকটা সময় থাকি।
ওইখান থেকে আনুমানিক ১ টার দিকে ব্যাক করে সীতাকুণ্ড পৌছাই ১:৩০ মিনিট। আপন রেস্তুরেন্ট এ দুপুরের খাওয়া শেষ করি ১৫০ টাকায়। এই রেস্তুরেন্ট টা সব থেকে বড়ো আর সেই সাথে পরিবেশ ও অনেক ভালো। এটাই সীতাকুণ্ডের সব থেকে ভালো রেস্তুরেন্ট। তারপর কিছু সময় রেস্ট নিয়ে আর হোটেল এ ফ্রেশ হয়ে রওনা দেই সীতাকুণ্ড থেকে মিনি বাস এ করে বাঁশবাড়ি বাজার, ২০ টাকা করে লোকাল জনপ্রতি। সেখান থেকে আবারো ২০ টাকা করে CNG তে বাঁশবাড়িয়া ঘাট। আমরা পুরো বিকাল ও সন্ধ্যাটা ঐখানে কাটানোর পর রাতে একবারে ডিনার ১০০টাকার ভিতর শেষ করে হোটেল ফিরি একইভাবে লোকেল করে।
দ্বিতীয় দিন খরচ টোটাল: ৫৩০ টাকা ( এক রাতের হোটেল ১৬০ টাকা ধরেই )

#তৃতীয় দিন: খুব ভোরে সকাল ৬ টার দিকে উঠে ২০ টাকায় নাস্তা শেষ করে রওনা দেই সীতাকুণ্ড এর উচু পাহাড় চন্দ্রনাথ মন্দির , উচ্চতা আনুমানিক ১৫০০ ফুটের মতো আমি পেয়েছি আমার জিপিএস ট্র্যাক থেকে। সীতাকুন্ড বাজার থেকে কলেজ রোড হয়ে ২০ টাকা লোকালে CNG তে চন্দ্রনাথ পাহাড় এর নিচে পৌঁছাই। আগেই বলে দিচ্ছি সীতাকুন্ড ইকো পার্ক দিয়ে যাবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ডাকাতির কারনে। আমরা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সময় লাগে ১.৩০ ঘন্টা, নামতে ৩০/৪৫ মিনিট। ধৈর্য নিয়ে উঠতে হবে,সাথে অবশ্যেই পানি আর শুকনা খাবার নিয়ে নিতে হবে। পাহাড়ের ভিতরে কয়েক জায়গায় আপনি ছোট ছোট দোকান দেখতে পারবেন পানি ও খাবার কিনার জন্য। আগেই বলে রাখি চন্দ্রনাথ মন্দিরে যেতে ২টা পথ আছে, ভুলেও ইকো পার্ক দিয়ে যাবেন না। সিঁড়ি বেয়ে যেই পথ দিয়ে উঠবেন সেই পথ ধরেই নামবেন কারণ চঁন্দ্ৰনাথ মন্দির থেকে পাহাড় বেয়ে ও একটি রাস্তা আছে যেটা কিনা আবার ইকো পার্ক এ গিয়ে শেষ হয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে কখনোই যাবেন না কারণ ওটাই ডাকাতি হবার রাস্তা।

pankaj
পাহাড়ের টপে উঠে সীতাকুণ্ড এর পুরো ভিউটা দেখা যায়। ঢাকা চট্রগ্রাম হাইওয়ে থেকে আমরা যে উচু মন্দিরের যে পাহাড় টা দেখি ওইটাই চন্দ্রনাথ পাহাড়।
অবশেষে আমরা ১২ টার ভিতর নিচে নেমে আসি এবং আবার ২০ টাকা লোকেল করে সীতাকুন্ড বাজার এসে দুপুরের খাওয়া শেষ করি ১০০ টাকায় কয়েক রকমের ভর্তা দিয়ে।
তারপর আবার সেখান থেকে আমরা ১ টার দিকে লোকালে ২০ টাকা করে CNG করে ইকো পার্ক গেটে চলে যাই সহস্রধারা ও সুপ্তধারা ঝর্ণা দেখবো বলে। ঈদ এর কারণে টিকেট ৩০ টাকা করে রেখেছে এমনি ২০ টাকা করে। ভিতরে ঢুকেই CNG ৫০ টাকা জনপ্রতি করে সহস্রধারা ঝর্ণার কাছে নামিয়ে দেয় ১.৩০ এর দিকে, সেখান থেকে ৪৬৫ তার মতো সিঁড়ি বেয়ে একদম নিচে নেমে যাই ঝর্ণায়। নামতে আর উঠতে সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টা ম্যাক্সিমাম। তারপর আবার CNG করে ৫০ টাকায় সুপ্তধারার রাস্তার কাছে, তারপর আবার খাড়া পাহাড় নিচে নেমে ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে ও ঝিরিপথ ধরে ৩০ মিনিটের আগেই পৌঁছে যাই সুপ্তধারায়, এই ঝরণা তা আসলেই অনেক সুন্দর তার কারণ এইখানে ৩ ভাগে পানি পড়ছে। ঐখান থেকে আমরা ৪ টার দিকে রওনা দিয়ে পার্ক গেটে আছি ৩০ টাকা করে তারপর আবার ২০ টাকা করে CNG তে ৪.৪৫ এর ভিতর সীতাকুণ্ডে হোটেল এসে পৌঁছাই। ফ্রেশ হয়ে হালকা পাতলা ২০ টাকার মতো নাস্তা করেই আমরা ৬ টার বাস এ করে ৪৭০ টাকা ভাড়ায় ঢাকায় ১১.৩০ পৌঁছে যাই। আমরা একদিন আগেই টিকেট কেটে রেখেছিলাম ঈদ এর ভিড়ের কারনে। সময় কম থাকার কারণেই আমরা ইকো পার্কের সব জায়গায় CNG দিয়েই কভার করেছি তাই খরচ তা একটু বেশি পড়েছে। তৃতীয় দিন খরচ টোটাল: ৮৫০ টাকা।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.