Travel & Explore Yourself | Do It Now, The Future Is Promised To No One.

রামেশ্বরমের Pamban Bridge পৃথিবীর ২য় ভয়ংকার এবং এক্সাইটিং রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসুন।

Leave a comment

লিখেছেনঃ শেখ আব্দুর রহমান।

তারিখঃ ৭/৭/২০১৭

আপনি কি পৃথিবীর ২য় ভয়ংকার এবং এক্সাইটিং রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে চান? তাহলে বুকে সাহস আর হার্ট সেইরকম থাকলেই কেবল এই রেল ব্রীজ পার হতে পারবেন।

পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রেল সেতুর তালিকায় রামেশ্বরমের Pamban Bridge। বিখ্যাত এই Pamban Bridge যা তামিল নাড়ু রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত ও শ্রীলংকার খুব কাছেই ।

এটি মুলত Rameshwarm শহরের অবস্থিত। এই ব্রীজটিকে বলা হয় Corrosive bridge যা আমেরিকার ফ্লোরিডার পরেই এই ব্রীজটি ২য় অবস্থানে বিদ্যমান। এটি ভয়ংকর এক ব্রীজ যেখানে আবহাওয়ার কোন ঠিক নেই। সাইক্লোন এর আঘাতে এটি ২ বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই ব্রীজটি ভারতের মধ্যে প্রথম Sea bridge এবং সব চেয়ে বড় ব্রীজ ছিল সাগরের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য ২০১০ সাল পর্যন্ত। এখনো ব্রীজটি টিকে আছে, বয়ষ ১০৩ বছর।

এটি ১৯১৪ সালের দিকে করা হয়েছিল। এই ব্রীজটি পাড়ি দিতেই অনেকে টামিল নাড়ুতে যেয়ে থাকে। আর Rameshwarm এই জন্য বিখ্যাত তবে টেম্পল এর জন্য ও বিখ্যাত। এই ব্রীজটি Pamban দ্বীপ এর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। ব্রিটিশরা তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন ই এই ব্রীজ করেছিল ১৯১৪ সালে যা আজ ও টিকে আছে। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার দের সত্যি মাপার ক্ষমতা কারো নেই তবে ভারতের রেল ইঞ্জিনিয়ারদের ও ক্রেডিট দিতে হবে কারণ এই এরিয়া টা সত্যি সাইক্লোনের কেন্দ্রবিন্দু আর সেই সাগরেই এই ব্রীজ এখনো টিকিয়ে রেখেছে।

ব্রিটিশরা শ্রীলংকার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নতির জন্যে এই সেতু তৈরি করেছিল। এই সেতুটিকে আবার মাঝামাঝি জায়গায় দুই ভাগে খুলে দিয়ে, নীচ দিয়ে জাহাজ চলাচলও করতে পারে। সেই সময় সমুদ্র পথে জাহাজও অন্যতম যোগাযোগ ছিল – তাই এই ব্যবস্থা।

Ramanathaswamy temple এর জন্য খুব বিখ্যাত। মুল আকর্ষণ ই হচ্ছে এটা তার পাশাপাশি ট্রেন ব্রীজ আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ব্রীজে দাঁড়িয়ে আপনি সূর্য উঠছে সেটা দেখতে পারবেন যা আমরা কুয়াকাটায় দেখতে যায় যদি ও কুয়াকাটা তে অস্ত যাওয়া দেখা যায় আর এখানে উদয় হচ্ছে সেটা দেখতে পারবেন ব্রীজে দাঁড়িয়ে, ওহহ সে এক অন্য রকম ফিলিংস যা আপনি কখনো ভুলতে পারবেন না।

পাশেই গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা ব্রীজ আছে। যেখানে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ ট্রেন কখন আসবে সেটা দেখার জন্য গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করে। কারণ সবার এই লোকাল ট্রেন চড়ার বুকে তেমন সাহস থাকে না। সত্যি এক্সাটিং ব্যাপার-স্যাপার।

প্রাচীন এই বিপজ্জনক রেল সেতুটি তার নিজস্ব ভয়ংকর সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিকতা দিয়ে সম্প্রতি ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে।

bridge

** কিভাবে যাবেন?
১। প্রথমে বেনাপোল পার হয়ে বনগাও স্টেশন থেকে শিয়ালদাহ যাবেন তারপর অটোতে করে হাওড়া স্টেশন আসবেন। তারপর হাওড়া স্টেশন থেকে চেন্নাই যেতে হবে সেক্ষেত্রে কলকাতা চেন্নাই মেইল ট্রেন আছে যা রাত ১১:৪৫ মিনিটে ছাড়ে। পৌছাতে ২৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট লাগে, ভোর ৪ টার দিকে পৌছাবে। টাইম ফিক্সড হয়তো ৩০ মি এদিক সেদিক হতে পারে।

ওখানে নেমে অটোতে করে গ্রীমস রোডে যাবেন আর একটা হোটেল ভাড়া করে ২/৩ দিন চেন্নাই সিটিতে থেকে ঘুরাঘুরি এবং পৃথিবীর ২য় লংগেস্ট মারিনা সি বিচ ঘুরে আসতে পারেন যা চেন্নাই সিটি থেকে মাত্র ৭ কি.মি. দূরে অবস্থিত। তারপর আপনার গন্তব্যে যেতে অথবা শরীরে কুলালে চেন্নাই স্টেশনে নেমে
একটু সিটিতে ঘুরে বিকেলেই আবার ট্রেনে করে রামেশ্বরম এক্সপ্রেসে উঠতে পারেন। যদি চেন্নাই নেমে মারিনা সি বিচে ঘুরতে চান তাহলে এমন সময় ও দিনে ট্রেনে উঠতে হবে যাতে রবিবার ভোরবেলা চেন্নাইতে পৌছাতে পারেন তাহলেই বুঝবেন আর দেখবেন মারিনা সি বিচ কি জিনিস, তবে কক্স বাজার ই বেস্ট।

এরপর চেন্নাই এগমোর স্টেশন থেকে Rameswaram. Exp -16713 নম্বর ট্রেনের টিকিট কেটে Rameswaram পর্যন্ত যেতে হবে। মোট ৬০০ কিমি. দূরে। বিকেল ৫:৪৫ মিনিটে ছাড়ে আর পৌছায় ভোর ৪:৩৫ মিনিটে। মোট ১১ ঘণ্টার মতো লেগে যাবে।

ভাড়া নিবেঃ
১। ৯২৫ রুপি ( এসি 3A class )
২। স্লিপারঃ ৩৫৫ রুপি

রামেশ্বরম যেতে হলে আপনাকে চেন্নাই এসে তারপর Chennai Egmore rail station এ যেতে হবে যা চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনের পরের স্টেশন। মাত্র ১০/১২ মিনিট লাগবে চেন্নাই স্টেশন থেকে। আর যদি গ্রীমস রোডের হোটেল থেকে যেতে চান তাহলে লাগবে ৩০/৩৫ মিনিটের মতো।

**অপশন দুইটা আছেঃ
১। আপনাকে একদম শেষ স্টেশন রামেশ্বরম স্টেশনে নামতে হবে এবং পামবান ব্রীজের দিকে আবার অটোতে করে আসতে হবে যার দূরত্ব ১২ কিমি.।

২। আপনি রামেশ্বরম এর আগের স্টেশন Mandapam ( মান্দাপাম স্টেশন ) এ নামতে পারেন কারণ Pamban Bridge এই স্টেশন থেকে ৪ কিমি. এর কিছু কম দূরে অবস্থিত । সেক্ষেত্রে এই স্টেশনে ট্রেন পৌছাবে রাত ৩:২৫ থেকে ৩:৩০ মিনিটের মধ্যে। ট্রেন এই স্টেশনে মাত্র ১ মিনিট থামে তাই আগে ভাগে সব কিছু রেডি রাখবেন যেন থামার সাথে সাথে নেমে যেতে পারেন তা না হলে লাস্ট স্টেশনে নামতে হবে।

পরামর্শঃ
আপনি যেহেতু পৃথিবীর ভয়ংকার সেতু দেখতে যাবেন সেই সাথে ওই সেতুতে হেটেও আসবেন সেক্ষেত্রে Mandapam station 🚉 এ নামা উচিত। যদি এখানে নামেন তাহলে আপনার জন্য সুবিধা।

এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন এই ৩ কিমি. এর বেশি পথ কি হেটে যাবেন নাকি অটোতে করে যাবেন কারণ হেটে গেলে অন্য রকম এক ফিলিংস পাবেন। হাটার সময় আপনি সাগরের অন্যরকম এক বাতাসের অনুভুতি পাবেন। কিছুদুর হেটে গেলেই পাবেন ছোট এক স্টল যেখানে চা, বিস্কিট অনেক কিছুই পাবেন। চায়ের কাপ মাত্র ৫ রুপি নিবে। যদি ৪/৫ জন ছেলে হন সেক্ষেত্রে হেটে যেতে পারেন। কথা বলতে বলতে ৫ টা বাজার কিছু সময় পর পৌছে যাবেন।

এরপর সেতুতে ঘোরাঘুরি করতে থাকবেন আর ৬ টার কিছু সময় পর ই সূর্য উঠতে শুরু করবে প্রথমে গোল্ডেন কালার দেখবেন পুরা আকাশ তারপর ধিরে ধিরে দেখবেন অন্যরকম এক আকাশ যা কুয়াকাটায় দেখা যায়। এরপর পামবান ব্রীজ মানে রেলের ব্রীজে উঠে কিছু ছবি তুলে নিতে পারেন তবে রেলের লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে নিবেন কখন ট্রেন যাবে। আর চাইলে ট্রেনে চড়ে রোমাঞ্চকর ও অ্যাডভেঞ্চার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

আপনি চাইলে হাওড়া টু চেন্নাই, চেন্নাই এগমোর স্টেশন টু Rameshawr এবং Rameshwar to চেন্নাই এগমোর স্টেশন, চেন্নাই টু হাওড়া স্টেশন টিকিট কেটে আপনার ঘরে পৌঁছে দিতে পারি। আমাকে শুধু সম্ভাব্য তারিখ বলতে হবে আর পাশাপাশি কতদিন কোথায় থাকবেন। অর্থাৎ আসা + যাওয়ার টিকিট আগে থেকেই পেয়ে যাবেন ঘরে বসেই। শুধু ঘুরে ঘুরে সময় মতো স্টেশনে গেলেই হবে। এরকম সুযোগ আপনি আর কোথাও তেমন পাবেন না। কারণ ইন্ডিয়ার ট্রেনের টিকিট পেতেই প্রচন্ড ঝামেলা পোহাতে হয় বা কলকাতাতে একদিন থাকার ও দরকার হয়।

**যাতায়াত খরচ কত হবেঃ( প্রতিজন )
বেনাপোল কে কেন্দ্রবিন্দু ধরে একটা হিসেব দিচ্ছি যা আপনার সুবিধা হবে। এই হিসেবে টাকা নিয়ে বের হলেই হবে।

ভ্রমণ ট্যাক্স + এক্সট্রা= ৫০০+১০০= ৬০০ টাকা, বেনাপোল টু বনগাও = ৩০ রুপি অটো ভাড়া।

বনগাও স্টেশন টু শিয়ালদাহ = ২০ রুপি, শিয়ালদাহ টু হাওড়া স্টেশন ( অটো ভাড়া) = ৫০ রুপি, হাওড়া টু চেন্নাই = ৬৬৫ রুপি ( স্লিপার) , এসি ২১৬০ রুপি ( Tatkal) আর নরমাল ভাবে টিকিট পেলে ১৭৪৫ রুপি।

চেন্নাই স্টেশন টু এগমোর স্টেশন = ১০ রুপি ভাড়া। তবে হাতে থাকবে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা সময়, এইই সময়ে আপনি পৃথিবীর ২য় দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত + চেন্নাই সিটিতে ঘুরাঘুরি করতে পারেন যা চেন্নাই ট্রেন স্টেশন থেকে ৮ কি.মি. দূরে। যাইহোক, এই সময়ে চেন্নাই এগমোর স্টেশন টু সরাসরি Rameshwar = ৩৫৫ রুপি ( স্লিপার ) মোট একজনের খরচ হবে = ৩৫০০ রুপি আসা + যাওয়া) যদি ট্রেনের টিকিট সব স্লিপার হয় আর এসি হলে বেড়ে যাবে + টিকিট এজেন্ট ফি ৫০০/৬০০ রুপি ধরে রাখুন। তাহলে বিডি টাকায় আসছে ৫০০০ টাকা + খাওয়া দাওয়া যে কয়দিন লাগবে তবে ট্রেনে লেগে যাবে আসা + যাওয়া = ৬ দিন। খাওয়া দাওয়া বাবদ প্রায় আরো ২৫০০ টাকা ধরে রাখুন।

মোটামুটি বাংলাদেশি ১১০০০/১২০০০ টাকা নিয়ে বের হলে খুব ভালো ভাবে বেনাপোল টু Rameshwar sea, Rameshawr To Benapole পর্যন্ত আসতে পারবেন।

ভিডিও দুটি দেখুন তাহলে বুঝবেনঃ
https://www.youtube.com/watch?v=lpHpLKKxmxY

https://m.youtube.com/watch?v=x_gMDOfVi6s

https://m.youtube.com/watch?v=pz9zlaqcbrw
বড় জাহাজ আসলে ব্রীজটি দুই ভাগ হয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় যা সত্যি বিশ্বয়কর আবিষ্কার। এই ভিডিওটি দেখুন।

ট্রেনের টিকিট, এয়ার টিকিট, ইন্ডিয়া ট্রিটমেন্ট ও ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু জানতে মেসেস বা কমেন্টস করুন, দ্রুত সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন।

বি:দ্র: ব্রিটিশদের বিশ্বয়কর আবিষ্কার, ভয়ংকর সাইক্লোনের কেন্দ্রবিন্দু ট্রেন অভিজ্ঞতা ও সুজ্জি মামার উদয় হওয়া দেখতে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে। ইতিহাসের সাক্ষী কে না হতে চাই? এটি ইউনেস্কোর তালিকাতে যোগ হয়েছে।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.