Travel & Explore Yourself | Do It Now, The Future Is Promised To No One.

স্কুবা ডাইভিং যাদের স্বপ্ন তাদের আন্দামান ভ্রমণ কাজে আসবে ।

Leave a comment

লিখেছেনঃ সায়েমা সিদ্দিকা

তারিখঃ ১৬/৭/২০১৭

রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা নতুন নতুন রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে ভালোবাসেন। টাকা আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কখন কীভাবে পূরণ হবে স্বপ্নটা। স্কুবা ডাইভিং যাদের স্বপ্ন তাদের কাজে আসবে ভ্রমণপ্রিয় সায়েমা সিদ্দিকার ভ্রমণের গল্পটা-

আন্দামান ভ্রমণ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে সবচেয়ে আগে আমি যে কথাটা বলে নিতে চাই তা হলো, হাতে বেশ কম পরিমাণ টাকা নিয়ে যখন স্কুবা ডাইভের ভূত ঘাড়ে চাপিয়ে ছিলাম, তখন হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করেছিলাম কোথায় সবচেয়ে কম খরচে এটা করা সম্ভব? সেই সময়ই দেখলাম একমাত্র বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আন্দামানেই খুব সহজসাধ্য এই সুযোগ রয়েছে। এরপর শুরু হলো আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
৫৭২টি দ্বীপের সমষ্টিতে গড়ে উঠা ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান। সৌন্দর্যের দিক থেকে যেমন অবর্ণনীয়, আমার ঘুরে আসার পরের অভিজ্ঞতা ছিল তেমনই অসাধারণ। এখানে আসা যাওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু উল্ল্যেখযোগ্য বিবরণ প্রকাশ করছি। যারা আন্দামান যেতে আগ্রহী তাদের জন্য এ তথ্যগুলো পথ প্রদর্শনে সহায়তা করবে বলে আশা করি।
রাঙ্গাত। ছবি- সায়েমা সিদ্দিকা
ভিসা- খরচ- থাকা- খাওয়া
আমরা ছিলাম মোট ৪ জন। বিমান পথে গিয়েছিলাম। মোট ৯ দিন ছিলাম আন্দামানে। শুধুমাত্র ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়েই আমরা গিয়েছি। আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার বিমান বন্দরে পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম ফিল-আপ করার পর ৩০ দিন আন্দামানে থাকার অনুমতি পেয়ে যাই সবাই।
বিমান ভাড়া এবং থাকা খাওয়া, ঘুরাফেরা, স্কুবা ডাইভ, গ্লাস বোট রাইডসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সব খরচ মিলিয়ে আমার ঢাকা থেকে গিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসা পর্যন্ত খরচ পরেছে ৩৫০০০/- টাকা। (এখন খরচ আরও বাড়বে, কারণ এটা ২০১৫ সালের কথা)। কয়েকদিন আগেও আমার প্লেন ভাড়া পরেছে ৯ হাজার আর যাবো অগাস্টে। বাজেট ৮ দিনের জন্য ২৫ হাজার। আমি বাসে কলকাতা গিয়েছিলাম, কলকাতা থেকে প্লেনে। এছাড়া শিপে যাওয়া যায়! ৬৬ ঘন্টা সময় লাগে। আমি বাংলাদেশ থেকে কোন হোটেল বুকিং দিয়ে যাইনি, এবং এ নিয়ে অনেক হয়রানীমূলক অভিজ্ঞতাও হয়েছে সেখানে। তবে প্রায় ১০/১২ টি দ্বীপের অসাধারণ মনোমুগ্ধকর সব সমুদ্রতটে ঘুরার সুযোগ হয়েছিল এসময়ে, যা ভুলিয়ে দিয়েছে সব ভোগান্তি।
নাইল আইল্যান্ড। ছবি- সায়েমা সিদ্দিকা
যেহেতু আন্দামান ভারতেরই ভূখণ্ড তাই এর খাবার-দাবার রীতিনীতি পুরোটাই গোটা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে। যথেষ্ট কম দামে ভালো মানের খাবার এখানে পাওয়া যায় বটে, তবে সব দোকানের খাবার কিন্তু একই রকম সুস্বাদু হয়না। এখানে খাওয়া নিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমনও দোকান পেয়েছি যারা ঘুম থেকে উঠে মধ্যরাতে আমাদের পছন্দমতো খাবার রান্না করে দিয়েছে।
এ কয়দিনে আমার দেখা উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো ছিলঃ-
পোর্ট ব্লেয়ার শহরের মধ্যেই কারবিন্স কোভ বিচ, সেলুলার জেল, সাউন্ড এবং লাইট শো, জগার্স পার্ক, গান্ধি পার্ক। সবচেয়ে লোমহর্ষক ছিল জরোয়া বনের ভিতর দিয়ে যাবার পথটুকু, যেটার গেইট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খোলা হয় আর যে কয়টা গাড়ী ওই সময়ের মধ্যে সিরিয়ালে আসে এদের এন্ট্রি করা হয়। এরপর গেইটে প্রবেশের আগে শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট গতিতে চলার নির্দেশনা দিয়ে সিরিয়ালের শুরু এবং শেষে পুলিশ প্রহরায় চলাচল করতে হয় সবাইকেই। তাছাড়া গিয়েছি রাঙ্গাট হয়ে বারাতাং দ্বীপে লাইমস্টোন গুহায়, ম্যানগ্রোভ ওয়াকওয়ে ক্রিক্স এ, মাড ভলকানো, মায়া বান্ডারের মরিকাডেরায়, কারামাতাং বিচ, দিগলিপুর দ্বীপ, যেখানে একজোড়া দ্বীপের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হয়ে একটা দ্বীপ থেকে অন্যটায় যাওয়া যায়! হ্যাভলক আইল্যান্ড এর রাঁধানগর বিচ, কালাপাথর বিচ, বিজয় নগর বিচ, নেইল আইল্যান্ডের রামনগর বিচ, ভরতপুর বিচ, সিতাপুর বিচ, কালিপুর বিচ, লক্ষণপুর বিচ, ন্যাচারাল ব্রিজ, রোজ আইল্যান্ড (ব্রিটিশ শাসনামলে যেখানে পোর্ট ব্লেয়ারের রাজধানী ছিল)। এরপর ওয়ানডোর বিচ এ ফিশারিজ মিউজিয়াম, সমুদ্রিকা মিউজিয়াম, এন্থ্রপলজিকাল মিউজিয়ামও গিয়েছি।
রোজ আইল্যান্ড। ছবি- সায়েমা সিদ্দিকা
উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ
১। আন্দামান ভ্রমণে যেতে ইচ্ছুকেরা অবশ্যই সাথে করে পাসপোর্টের কমপক্ষে এক ডজন ফটোকপি নিয়ে যাবেন। প্রতি মুহূর্তে এই কপি যখন তখন চেয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
২। যেহেতু আন্দামানে বাঙ্গালীদের আবির্ভাব বেশী তাই লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যেকোন ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই নিজ দায়িত্বে সাবধান থাকা জরুরী।
৩। যেকোন তথ্যের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চাইতে পারেন, পৃথিবীর অন্যসব উন্নত দেশের মতোই এখানাকার পুলিশ যথেষ্ট সহযোগী মনোভাব রাখে।
৪। প্রয়োজন মনে করলে, বিমানবন্দর থেকেই ইনফরমেশন ডেস্কের যোগাযোগ নম্বরগুলো সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
৫। কম খরচের আশা করে কেউ যদি অপ্রতিষ্ঠিত এজেন্টের কাছে প্যাকেজ ট্যুরের জন্য চলে যান তাহলে ভোগান্তি অনেকদূর যেতে পারে। এক্ষেত্রে এজেন্টের পূর্ণ বিবরণ আগে জেনে নেয়া নিজের জন্য সুফল এনে দিতে পারে।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.