Travel & Explore Yourself | Do It Now, The Future Is Promised To No One.

শ্রীমঙ্গল ট্যুর ১৫২৬ টাকায়

Leave a comment

৩ রাত ২দিন।
স্থান: শ্রীমঙ্গল।
ট্যুরিজম স্পট প্রথম দিন: লাউয়াছড়া,মাধবপুর-লেক,ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার,আনারস বাগান,পান বাগান,নীল খন্ড
দ্বিতীয় দিন: বাইক্কার বিল,টিলার উপর জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ,বধ্যভূমি।

খরচ:-১৫২৬ টাকায় শ্রীমঙ্গল ট্যুর

ভ্রমণবিবরন ও পূর্ণাঙ্গ খরচসমূহ:-

অনেক ট্যুর প্লানিং করার পরও তা বাস্তবায়ন করতে না পারায়,বন্ধু মহলে বিনোদনের মাধ্যম হয়ে গিয়েছিলাম।তবে বন্ধুদের উশ্কানি মূলক কথা বার্তা গুলোই এই ট্যুর বাস্তবায়ন করতে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।যাই হোক এটা ছিল আমাদের বন্ধুদের প্রথম ট্যুর।যাব কি যাব না এই দ্বিদ্ধা বন্ধুদের কাটানোর জন্য আগে থেকে ৮টি ট্রেনের টিকেট ভ্রমনের তিন আগে কনফার্ম করি।রাত ১২টার ট্রেনের টিকিট অগ্রীম বুকিং থাকায় রাত ১০টার ট্রেনের টিকেট কাটি।জন প্রতি টিকেট ২১৫ টাকা।

#কমলাপুর_রেলস্টেশন:-
আমাদের বাসা থেকে রাত ৭টায় রওনা দিয়ে ৮:৪৫টায় কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌছেঁ যাই।(জন প্রতি ভাড়া ১০টাকা)।রাতের খাবার বাসা থেকেই নিয়ে যাই।ট্রেনে বন্ধুরা এক সাথে মিলে গান গাই।মনে থাকার মত একটা ট্রেন ভ্রমণ।রাত ৩টায় পৌছেঁ যাই শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে।

#শ্রীমঙ্গল_রেলস্টেশন:
অতি ঠান্ডায় কাপুনি উঠেছিল,তাই শরীর গরম করার জন্য সবাই স্টেশনের চায়ের দোকানে যাই।
(চা জন প্রতি ৬টাকা)জায়গাটি অপরিচিত হওয়ায়,আর সাহস না থাকায় স্টেশনেই রাত কাটাই।সকাল ৮টার দিকে বের হয়ে পড়ি হোটেল ঠিক করার জন্য।শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে মেইন সড়ক ধরে এগোতে থাকলে সামনে অনেক হোটেল পড়বে।২জন বন্ধু হোটেল ঠিক করতে যায়।আর আমরা বাকি ৬জন সকালের নাস্তা করতে একটা রেস্তরায় ঢুকি।রেস্তরার নাম গাউছিয়া হোটেল।এখানকার অন্যান্য হোটেল থেকে এটা তুলনামূলক ভালো।সকালের নাস্তা:২টা পরোটা ডালভাজি।পরোটা ৭টাকা করে আর ডালভাজি ১০টাকা।(নাস্তায় জন প্রতি খরচ ২৪টাকা)

#হোটেল_আল_মদিনা:
১৫০০ টাকায় একদিনের জন্য একটা হোটেল ঠিক করা হয়।এক রুমে ২টা সিনঙ্গেল বেড ১টা ডাবল।আমাদের ৮ জনের জন্য পারফেক্ট।(জন প্রতি খরচ ১৯০টাকা)

#অগ্রীম_টিকেট_বুক_ঢাকার_জন্য:
শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে ঢাকা ফেরার জন্য কোনো টিকেট পাওয়া যায়নি।সব অগ্রীম বুক হয়েছে।তাই দেরি না করে তারাতারি বাসের ৮টি টিকেট ৩,০৪০টাকায় কনভার্ম করে ফেললাম।(জন প্রতি খরচ ৩৮০টাকা।)

#টমটম_রিজার্ভ:
টমটমের একদিন মানে ৬ ঘন্টা।একদিনের জন্য ১৫০০ টাকা চেয়েছিল।
আমরা কথা বলে ১১০০ টাকায় ঠিক করি।(জন প্রতি খরচ ১৪০টাকা)

#১ম_দিন_ভ্রমণ:
১২টা থেকে যাত্রা শুরু করি লাউয়াছড়ার উদ্দেশ্যে।
যাওয়ার রাস্তায় অসংখ্য চা বাগান আমাদের নজর কারে।অপরুপ সৌন্দর্য।১২টার দিকে রওনা দিয়ে ১টায় সেখানে পৌছাঁই।লাউয়াছড়া প্রবেশের টিকেট ৫০ টাকা করে।তবে ইস্টুডেন্ট আইডি কার্ড থাকায় তা ২০ টাকা করে।(প্রবেশ জনপ্রতি খরচ ২০টাকা)।সবাই একসাথে ঘুরা শুরু করলাম।অনেক নাম না জানা গাছের দেখা মিলল।তবে মজার ব্যাপার হলো বনের বিভিন্ন জায়গায় সাইনবোর্ডে লিখা ছিল-বন্যপ্রাণীদের উত্যক্ত করবেন নাহ।বন্যপ্রাণী তো দূরের কথা একটা পাখিও দেখলাম না।শুধু ডাক শুনেছি।লাউয়াছড়া ডুকলে আপনি বাশঁ খাবেন।আই মিন অনেক ধরনের বাশেঁর দেখা পাবেন।অনেক নাম না জানা বাশঁ গাছ আছে।বের হবার সময় সান্তনা সরূপ তিনটা বানর দেখেছিলাম।আমাদের সময় স্বল্পতার কারনে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়েছিলাম।তবে শুনেছিলাম ওখানে মনিপুরীর একটা গ্রাম আছে।ওটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।আপনারা ঘুরে আসতে পারেন।বের হয়ে টমটম মামাকে নিয়ে চলে গেলাম মাধবপুর-লেক ঘুরার জন্য।ওখানকার মানুষ গুলো অনেক ভালো ছিল।ছোট ছোট বাচ্চারা আমাদের হাতের ঈশারায় স্বাগতম জানিয়েছে।দুপুর ৩টায় মাধবপুর-লেকে পৌছেঁ গেলাম।ওখানে গাড়ি রাখার জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়েছে।প্রবেশের জন্য কোনো টিকেট বা টাকা লাগে না।
গাড়ি পার্কিং+টমটম মামার খাবার টাকা=১০০টাকা।(জন প্রতি খরচ ১৫ টাকা)
ওখানকার খাবার তেমন না থাকায় এবং খরচ অধিক হওয়ায় দুপুরে হালকা খাবার খেয়ে মাধবপুর-লেকে ঢুকে পরলাম।(হালকা খাবার খরচ ৫০ টাকা)।মাধবপুর-লেকটা পুরোটাই অসাধারণ পাহাড়ের উপর ওঠা মাত্র চারপাশে তাকিয়ে সবাই হতবাক।সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল ছবি তুলতে।১ম দিনের ট্যুরের বেষ্ট জায়গা ছিল মাধবপুর-লেক।লেকটা পুরটা ঘুরার ইচ্ছে ছিল।পাহাড় থেকে ভারতের বর্ডার দেখা যাচ্ছিল।সবার ইচ্ছে হলো ভারতের বর্ডারের কাছে যাব।লেক থেকে বের হয়ে টমটম মামাকে নিয়ে চলে গেলাম ভারতের বর্ডারের কাছে।বর্ডারের নির্দিষ্ট সীমানা পর্যন্ত গিয়েছিলাম।সরু একটা খাল ছিল ওটা পাড় হওয়া টোটালি নিষেধ।খালের পাড়ে দাড়িয়ে ভারতের মানুষ দেখতে পেলাম হাল চাষ করছে।সময় তখন ৫টা।টমটম মামা রওনা হলেন আমাদের আনারস বাগান ও পান বাগান দেখাতে।টিলায় আড়াআড়ি ভাবে কয়েকটা লাইন করে আনারস চাষ করেছে।পুরো আনারস বাগান আর পান বাগান টমটমে ঘুরে ঘুরে দেখেছি।আমাদের এক বন্ধু কিছু পান পাতা চুরি করে এনেছে।কাজটা অত্যন্ত রিস্কি ছিল।ওখানকার স্থানীয় মানুষরাও সাহস পায় না পান পাতা ধরতে।পান পাতা নেয়া মাত্রই এই বিষয়ে অবহিত করেন আমাদের টমটম মামা।
আমরা তাড়াতাড়ি ঐ জায়গা ত্যাগ করি।সন্ধ্যার একটু পরে নীলখন্ড পৌছাঁই।সাত রং এর চা খাওয়ার উদ্দেশ্যেই সেখানে যাওয়া।এক রাত জেগে থাকায় সবাই ক্লান্ত অনুভব করি।নীলখন্ড টি স্টলে মানুষের ভিড় আর চা পেতে দেরি হবে শুনে সবাই বেরিয়ে পরি হোটেলের উদ্দেশ্যে।পরের দিন সেম টাইমে আসতে বলে টমটম মামাকে বিদায় দিয়ে আমরা হোটেলে চলে যাই।গাউছিয়া হোটেল রাতের খাবার ভাত,ভর্তা,সবজি,ডাল(জন প্রতি খরচ ৭০ টাকা।)

#২য়_দিন_ভ্রমণ:
১০ টায় সকালের নাস্তা শেষ করলাম।সকালের নাস্তা ৩টা পরোটা ডালভাজি।(জন প্রতি খরচ ৩১টাকা)।
যেহেতু একদিনের জন্য হোটেল ভাড়া করেছি তাই ব্যাগ,ট্যাগ ঘুছিয়ে ১১:৩০টায় হোটেলের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলাম।নিচে টমটম মামা ঠিক টাইমে এসে উপস্থিত।রওনা দিলাম বাইক্কার বিলের উদ্দেশ্যে।টমটম মামা গাড়িতে যতদূর নেয়া সম্ভব নিয়ে গিয়েছিলেন।তারপর প্রায় ৩ থেকে ৪কিঃমিঃ রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে প্রায় ৩০মিনিট লেগেছিল বাইক্কার বিল যেতে।বাইক্কার বিল পৌছাঁনোর একটু আগে প্রায় কয়েকশো অতিথি পাখি দেখলাম ছোট একটা দিঘীতে।পাখিদের কলাহল আমাদের ঘীরে।বাইক্কার বিলের পানি পুরো স্বচ্ছ।পানির নিচে কি কি আছে প্রায় সব দেখা যাচ্ছিল।
ওখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে সেখানে প্রবেশ করতে ১০ টাকা এবং ওয়াচ টাওয়ারে ওঠতে ২০ টাকা মোটা ৩০ টাকা লাগে।আমরা ৮ জন ২০০ টাকা দিয়েছিলাম।(জন প্রতি খরচ ২৫ টাকা।)
ওয়াচ টাওয়ার ওঠার পর চারপাশ দেখে আমরা পুরো থ।ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো বাইক্কার বিল দূরবীন দিয়ে অনেক অনেক অতিথি পাখি দেখলাম।খুব ইচ্ছে ছিল নৌকায় ঘুরে পুরো বিলটা উপভোগ করার।সময় কম থাকার কারনে নৌকায় ঘুরতে পারিনি বাইক্কার বিল থেকে চলে গেলাম গাউছিয়া হোটেলে দুপুরের খাবারের জন্য।আমাদের কয়েকজনের খাবার আইটেম পছন্দ না হওয়ায় নুর হোটেলে গেলাম।খাবার:ভাত,ডাল,সবজি,ভর্তা (জন প্রতি খরচ ৭০ টাকা,গাউছিয়া হোটেলে ৪০ টাকা)
খাবার শেষে রওনা দিলাম টিলার উপর জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ দেখার জন্যে।এর মাঝে আমরা একটা আনারস বাগানের টিলায় উঠি।আশে পাশে অসংখ্য টিলা দেখলাম।সেগুলোতেও আনারস চাষ করা হয়েছে।টিলা থেকে নেমে রওনা দিলাম মসজিদ দেখার উদ্দেশ্যে।সময় তখন ৫:১০টা ৫টার পর ওখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না।অনেক রিকুয়েষ্ট করার পরও নিরুপায় হয়ে চলে গেলাম বধ্যভূমিতে।ওখান থেকে টমটম মামাকে ১২০০টাকা দিয়ে বিদায় দিলাম।(জন প্রতি খরচ ১৫০টাকা)
বধ্যভুমিতে আট রং এর চা পান করলাম।(জন প্রতি খরচ ৮০টাকা।)
ঢাকায় ব্যাক করার বাস ছাড়ার কথা ১২:২০টায়।তাই ৯টা পর্যন্ত বধ্যভূমিতে আড্ডা দিয়ে টমটমে চলে গেলাম শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনে।(জন প্রতি খরচ ১০ টাকা)।
ওখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাতের খাবার জন্যে একটা হোটেলে গেলাম।রাতের খাবার:ভাত,ডাল,ভর্তা,সবজি।(জন প্রতি খরচ ৪০ টাকা)।
১১টায় চলে গেলাম বাস কাউন্টারে।ঠিক ১২:২০টায় বাস চলে আসে।

বিঃদ্রঃ
*আপনি যদি শ্রীমঙ্গল শহরটা পুরটা ঘুরতে চান তাহলে ৪দিন থাকতে পারেন।
*বাইক্কার বিল ও মাধবপুর-লেক ঘুরতে হলে হাতে একটু সময় বেশি রাখতে হবে।
*মাধবপুর-লেকের সৌন্দর্যের রফাদফা করেছে মানুষ।সবাই সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেয়ে সৌন্দর্য মলিন করে আসবেন না।
#Happy_journey😊

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.